এক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে জানা যায়- কুয়েতে তিনজন বাংলাদেশি মানব পাচারকারী রয়েছেন। এর মধ্যে একজন গ্রেফতার হয়েছেন। বাকি দুজন কুয়েত ছেড়ে পালিয়েছেন। তারা সবাই মিলে একটি বড় ধরনের মানব পাচার ও মানি লন্ডারিং চক্র গড়ে তুলেছে। এই তিনজন বাংলাদেশি দেশটির তিনটি বড় কোম্পানির প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
তারা কুয়েতের সরকারি চুক্তির আওতায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিচ্ছন্নকর্মী বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছেন এবং ৫০ মিলিয়ন কুয়েতি দিনারেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদিকে মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও অতিরিক্ত ভিসা নবায়ন ফি নেওয়ার বিষয়ে কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) কাছে ১১ জন বাংলাদেশি সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ ছাড়া পাপুলের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই জব্দ করেছে সিআইডি। মানব পাচারের এই বড় চক্রকে আটকের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল সালেহ। অন্যদিকে এমপি পাপুলের সঙ্গে জড়িত সবার নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন কুয়েতি এক এমপি।
কুয়েতে গত শনিবার আটক হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি শহীদ ইসলাম পাপুল। আটকের পরদিন অর্থাৎ গত রবিবার তার জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত তাকে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সিআইডির রিমান্ডে পাঠায়। তার রিমান্ডের মেয়াদকাল রবিবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এরই মধ্যে সিআইডি পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। ওই ১১ জনের সবাই এমপির বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি প্রতিবছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। কুয়েতের আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতের গোয়েন্দাদের কাছে এমপির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া বাংলাদেশের ১১ জন নাগরিক তার সহযোগী মূর্তজা মামুনের নাম উল্লেখ করেন। আদালত এমপির এই সহযোগীকে আটকের নির্দেশ দেয়।
গত বুধবার মূর্তজা মামুনকে আটকের পর তাকে সিআইডির দফতরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে বাংলাদেশের আটক এমপির বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পান গোয়েন্দারা। ওই দিনই আদালত মূর্তজা মামুনকে সিআইডির রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে।
পরদিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার সিআইডির কর্মকর্তারা এমপি শহীদকে নিয়ে মুশরিক এলাকায় অবস্থিত তার বাসার কার পার্কিংয়ে যান। সেখানে তার একটি গাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই উদ্ধার করা হয়। ওই চেকবইগুলো থেকে গত তিন মাসে কুয়েতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এমপি মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুলের গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সেই চিঠির জবাব এখনো আসেনি।
Leave a Reply